সৌদি আরবে গৃহকর্মী এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিকের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এখন সৌদি আরবের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বৈদেশিক শ্রমিক নিয়োগের সাথে সম্পর্কিত। সৌদি আরবের অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে প্রায় ১.২ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছে যেখানে প্রায় এক মিলিয়ন সৌদি নাগরিক বেকার রয়েছে। বস্তুত, সৌদি নাগরিকগণ দেশের মোট বেসরকারি খাতের মাত্র ১৫% চাকুরির বাজার দখল করে আছে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদগণ সৌদি সরকারকে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিমার্জনের জন্য সুপারিশ করেছে। অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের মূল কারণ হলো তারা কম মূল্যে অধিক সময় ধরে কাজ করতে রাজি যেটি সৌদি নাগরিকগণ করেন না। এই কারণে বেসরকারী খাতের কোম্পানিগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের পছন্দ করে থাকে।

সৌদি আরবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার আরও একটি অসুবিধা হলো বিভিন্ন দেশ যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া থেকে স্বল্প-দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী শ্রমিক এখানে কাজ করতে আসেন। এই স্বল্প-দক্ষতা সম্পন্ন অভিবাসী শ্রমিকগণ সৌদি আরবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। দক্ষ-শ্রমিকের জন্য যেখানে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান তার নিয়োগ ফি প্রদান করে থাকে সেখানে বিভিন্ন খাতের যেমন- নির্মাণকাজ, কৃষিকাজ বা পরিষেবামূলক (গৃহস্থালিকাজ) কাজের স্বল্প-দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী শ্রমিককে বিভিন্ন বেসরকারি নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে হয়। গড়ে নিয়োগ ফি প্রায় ৩,৫০০ ইউএসডি (আমেরিকান ডলার)। এটির মধ্যে ভিসা ফি বাবদ প্রায় ২,৩০০ ইউএসডি (আমেরিকান ডলার), বিমানভাড়া বাবদ প্রায় ৩৫০ ইউএসডি (আমেরিকান ডলার), এবং অন্য এজেন্টের জন্য প্রায় ২৪৫ ইউএসডি (আমেরিকান ডলার) অন্তর্ভুক্ত। দেখা যায়, নিয়োগের জন্য সর্বমোট খরচ তার কয়েক মাসের বেতনের সমান।

সৌদি আরবের শ্রম আইনানুযায়ী, শ্রমিকের কাছ থেকে নিয়োগ বাবদ কোনো ফি নেয়া যাবে না। কিন্তু নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। তারা বলে নিয়োগকৃত দেশে শ্রমিকের বেতন কাটা যাবে না। তাই শ্রমিক তার দেশ থেকে বিদেশে রওনা দেওয়ার আগেই তারা ফি কেটে রাখে।

সৌদি আরবের বেশিরভাগ নারী-গৃহকর্মী বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নেপাল, শ্রীলংকা ও ইথিওপিয়া থেকে আসেন। স্বল্প-দক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে এই নারী শ্রমিকগণ বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি স্টাডি থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারী-গৃহকর্মী আধুনিক শ্রম-দাসত্বের শিকার এবং তারা নির্ধারিত সময়ের পরে বেতন পায়। তাদের পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র ছিনিয়ে/কেড়ে নেয়া হয়।

গৃহস্থালি শ্রমিকদের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধি, বেশি বেশি অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ ও তাদের সম্পর্কিত সমস্যাসমূহ, অতিরিক্ত নিয়োগ ফি, তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ ইত্যাদি সমস্যা দূরীকরণের জন্য সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র গৃহস্থালি কর্মীদের জন্য কিছু নতুন নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় মনে করে যে এতে করে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং নিয়োগ ফি কমবে। এছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয় একটি ইলেকট্রনিক রিক্রুটমেন্ট (electronic recruitment) ওয়েব পেইজ চালু করেছে যেখানে কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলী, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য করণীয় ইত্যাদি বিষয় বলা আছে। এখানে বলা হয়েছে যে, চাকরির চুক্তিপত্র অবশ্যই অভিবাসী শ্রমিক বুঝতে পারে এমন ভাষায় হতে হবে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সুপারিশ করেছে যে, গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব এমন একটি দেশ যার উচিত ভিসা-বাণিজ্য বন্ধ করা, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সহজীকরণ করা যাতে করে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমে এবং পরিশেষে নিয়োগ ফি কমে।

সৌদি আরবে শ্রমিকের অধিকারের প্রতি সম্মান কতটুকু তা আরো জানতে আইটিইউসি গ্লোবাল রাইটস সূচকে ক্লিক করুন।