বাহরাইনের শ্রমশক্তির প্রায় ছয় লক্ষ হচ্ছে অভিবাসী শ্রমিক যা তাদের মোট শ্রমশক্তির ৫৫% থেকে ৭৫%। অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশই অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ যারা মূলত পরিষেবামূলক (গৃহস্থালি) কাজ, নির্মাণকাজ, পাইকারী ও খুচরা দোকানে কর্মরত।

একটি সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায় যে, বাহরাইনে প্রায় এক লক্ষ এর অধিক গৃহকর্মী রয়েছে। অভিবাসীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাহরাইনকে অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের চাইতে অগ্রসর বলে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাহরাইনই প্রথম দেশ যে আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) এর ডিসেন্ট ওয়ার্ক কান্ট্রি প্রোগ্রাম (Decent Work Country Programme- DWCP) বাস্তবায়নের জন্য সম্মত হয় যা শ্রমিকের অধিকার, আয়ের নিশ্চয়তা এবং নারী শ্রমিক নিয়োগের সম্ভাব্যতা বিষয়ে কাজ করে।

২০১৬ সালে অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুসহ অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে আরো একটি  ডিসেন্ট ওয়ার্ক কান্ট্রি প্রোগ্রাম (Decent Work Country Programme- DWCP) গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও বাহরাইনের অন্যান্য জাতীয় আইনে যেমন- অভিবাসী শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ (গৃহকর্মীগণ আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত), শ্রমিকদের নির্যাতন ও বেতন না দেয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, নিয়োগদানকারী (রিক্রুটিং এজেন্ট) প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনা, বাৎসরিক ও অসুস্থতাজনিত ছুটি বৃদ্ধিকরণ এবং অন্যায়ভাবে চাকরি চ্যুতির জন্য ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি বিষয়সমূহ বাহরাইনের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে বাহরাইনের লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (Labour Market Regulatory Authority- LMRA) ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু, রিক্রুটিং এজেন্সিকে লাইসেন্স প্রদান, শ্রমিকদের বদলি ইত্যাদি বিষয় দেখভাল করে থাকে। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের একটি আদেশ অনুযায়ী চাকরির চুক্তিপত্রের মধ্যে কাজের কর্মপরিবেশ, বেতন, ছুটি এবং শ্রমিকের দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই থাকতে হবে।

এই উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও বাহরাইনে অভিবাসী শ্রমিকগণ নিয়োগ এবং চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হয়। অভিবাসী শ্রমিকগণ নিজের দেশ থেকে যাবার পূর্বেই বাহরাইনের রিক্রুটিং এজেন্সিকে অত্যধিক পরিমাণ নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য থাকে। এই নিয়োগ ফি একজন শ্রমিকের দশ থেকে বিশ মাসের বেতনের সমান। এটি নির্মাণ শ্রমিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি প্রযোজ্য নয় কারণ সেখানে রিক্রুটিং এজেন্সি সহায়তা করে থাকে। রিক্রুটিং এজেন্সির অতি উচ্চ নিয়োগ ফি-র জন্য শ্রমিকরা প্রায়ই ঋণে (লোন) জর্জরিত হয় (অনেক সময় এর সাথে বিমান ভাড়া যুক্ত হয়)। এতে করে শ্রমিকরা সহজেই একটি অনিরাপদ এবং নির্যাতনমূলক কর্মপরিবেশের মধ্যে পড়ে।

এছাড়াও বাহরাইনের কাফালা পদ্ধতির (এই পদ্ধতিতে কোন শ্রমিক তার কফিল বা মালিক ব্যতীত অন্য কোথাও কাজ করতে বা সে দেশ ত্যাগ করতে পারবে না) জন্য অভিবাসী শ্রমিকগণ তাদের চাকরির বিষয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: কম বেতন দেওয়া, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, অপ্রতুল বিরতি ও ছুটি, পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, মৌখিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন ইত্যাদি (যৌন নির্যাতন শুধুমাত্র গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে)। নির্মাণ শ্রমিকগণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হয় যেখানে পর্যাপ্ত পানি ও বাথরুমের অভাব থাকে। ন্যূনতম বেতনের বিষয়ে যদিও বাহরাইনের সরকার ও মালিকগণ খুব বেশি কোন উদ্যোগ নেয়নি, তবে কিছু শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ যেমন ভারত ও ফিলিপাইন তাদের শ্রমিকদের জন্য একটি ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করেছে। এছাড়াও অভিবাসী গৃহকর্মীগণ অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের চাইতে কম উপার্জন করে। বাহরাইনের স্থানীয় জনগণ অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে বলে রিপোর্ট রয়েছে।  

বাহরাইনে শ্রমিকের অধিকারের প্রতি সম্মান কতটুকু তা আরো জানতে আইটিইউসি গ্লোবাল রাইটস সূচকে ক্লিক করুন।